পান চাষ ও তা বাজারজাত করে লাখপতি হয়েছেন দিনাজপুরের হিলির পান চাষিরা। গেলো শীত মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় পানের ফলন ভালো হয়েছে। দামও তারা ভালো পেয়েছেন। হিলি সীমান্তের পানের বরজ ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বরজে জেগে উঠেছে নতুন পান। গত এক থেকে দেড় মাস আগে পুরাতন পান শেষ হয়ে গেছে। বের হতে শুরু করেছে নতুন পান। আর নতুন পান বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বরজের মালিকরা খৈল ছিটিয়ে প্রতি সপ্তাহে সেচের পানি দিচ্ছেন। পানি আর খৈল প্রয়োগে নতুন পান দ্রুত বেড়ে উঠছে। চাহিদা বেশি থাকায় পানচাষিরা বরজ থেকে নতুন পান ভাঙছেন আর বাজারজাত করছেন।
হিলিতে সপ্তাহে দুই দিন বৃহস্পতি ও রোববার বসে পানের হাট। হাটের দিন সকাল থেকে শুরু হয় পানের আমদানি, চলে তা দুপুর পর্যন্ত। হিলি সীমান্তের ঘাসুড়িয়াসহ কয়েকটি গ্রাম থেকে পানচাষিরা নতুন পান আনছেন। এদিকে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি সীমান্তের শালুয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় থেকে আমদানি হচ্ছে পান। সম্প্রতি হিলি পান হাটি ঘুরে দেখা যায়, হাটে নতুন পানের আমদানি হয়েছে প্রচুর। স্থানীয় পান ব্যবসায়ীর পাশাপাশি এই হাটে আসছেন ঢাকার পান ব্যবসায়ীরা। ঢাকার ব্যবসায়ীরা আসলে চাষিদের খুশির শেষ থাকে না, কেন না পানের ভালো দাম পান তারা। নতুন বড় পান (ঝাঁড়া) চাষিরা বিক্রি করছেন ৫০০০ টাকা পোয়া (৪০ বিড়ায় এক পোয়া), যার বিড়া ১২৫ টাকা। তা খুচরা বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা ৫৫০০ টাকা, ১৪০ টাকা প্রতি বিড়া। মাঝারি পান বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা, বিড়া ৫০ থেকে ৫২ টাকা।
আবার ছোট পানের চাহিদা নেই ব্যবসায়ীদের নিকট। ফলে পানের দাম প্রায় পানির দামের মতো। ছোট পান বিক্রি করছেন বরজ মালিকরা মাত্র ১০০ টাকা পোয়া, বিড়া আড়াই টাকা। তা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পোয়া, বিড়া ১০ থেকে ১৫ টাকা। পান চাষি মোফাজ্জল হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার দুই বিঘার উপর একটা পানের বরজ আছে, তার বয়স প্রায় ২০ বছর হবে। পান চাষ করেই আমার সংসার চলে। শীত থেকে এই পর্যন্ত পানের ভালো ফলন পেয়েছি, দাম অনেক পেয়েছি। আজ আমি এক পোয়া বড় পান বিক্রি করলাম ৫০০০ টাকা দরে। পান চাষ করে আমি স্বাবলম্বী।’
পাঁচবিবির শালুয়া গ্রাম থেকে আসা অতুল দাস বলেন, ‘পুরাতন পানের যে দাম পেয়েছিলাম, নতুন পানেরও দাম তেমনি পাচ্ছি। প্রতি হাটে বরজ থেকে পান ভাঙি এবং হিলি পান হাটে বিক্রি করি। পানের বরজের যত্ন ভালোভাবে নিচ্ছি, কেন না এটাই আমার হালগরু।’ ঢাকা থেকে পান কিনতে আসা শওকত আলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রতি বৃহস্পতি ও রোববার হিলি হাটে পান কিনতে আসি। আজকে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ পোয়া পান কিনলাম। এই পানগুলো ট্রাকে করে ঢাকায় নিয়ে যাবো। হিলি হাটে ব্যবসা করে অনেক সুবিধা পাই। এখানে কোনো দালাল নেই এবং ব্যবসায়ী পরিবেশ আছে।’
হিলি বাজারের স্থানীয় পান ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা নতুন পানের মৌসুমে ব্যবসা করে থাকি। কিন্তু এইবার নতুন পানে কোনো লাভ করতে পারছি না। ঢাকা থেকে আসা পান ব্যবসায়ীরা বেশি দামে পান কিনে নিয়ে যাচ্ছে। যে পান এই সময় ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে কিনতাম, তা বর্তমান ৫০ টাকা বিড়া কিনতে হচ্ছে।’ হিলি খাসমহল হাট ও বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরমান হোসেন বলেন, ‘আমাদের এই হাট একটি ঐতিহ্যবাহী পানের হাট। এখানে আমরা কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করতে দেই না। ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ী পরিবেশ তৈরি করে রাখি। স্থানীয়সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এই হাটে পান কিনতে আসেন। আমরা তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দিয়ে থাকি।’